Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন আত্মগুণাভিমান, নিজেকে বুযুর্গ হিসেবে জাহির করা

আত্মগুণাভিমান, নিজেকে বুযুর্গ হিসেবে জাহির করা


।। ড. আহমদ আলী ।।

আমাদের সালাফে সালিহীনের মধ্যে কেউ নিজেকে ওলী ও বুযুর্গ হিসেবে দাবি করা তো দূরের কথা; বরং তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের পরিণতি নিয়ে সদা শঙ্কিত থাকতেন।

উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন সাইয়িদুনা আবূ বাকর আছ-ছিদ্দীক (রা.)। এতদসত্ত্বেও তিনি কখনো নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও বুযুর্গ ভেবেছিলেন বা এরূপ কিছু দাবি করেছিলেন মর্মে কোনো রিওয়ায়াত খোঁজে পাওয়া যায় না। বরঞ্চ তিনি সর্বক্ষণ তাঁর পরিণতি সম্পর্কে প্রচণ্ডভাবে শঙ্কিত থাকতেন।

একবার তিনি এক পাখিকে একটি গাছের ওপর বসা দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
طُوبَى لَكَ يَا طَيْرُ! وَاللهِ لَوَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ مِثْلَكَ تَقَعُ عَلَى الشَّجَرِ، وَتَأْكُلُ مِنَ الثَّمَرِ، ثُمَّ تَطِيْرُ؛ وَلَيْسَ عَلَيْكَ حِسَابٌ وَلَا عَذَابٌ، وَاللهِ لَوَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ شَجَرَةً فِي جَانِبِ الطَّرِيْقِ مَرَّ عَلَي جَمَلٍ، فَأخَذَنِي، فَأدْخَلَنِي فَاهُ، فَلَاكَنِي، ثُمَّ ازْدَرَدَنِي، ثُمَّ أخْرَجَنَي بَعْرًا، وَلَمْ أكُنْ بَشَرًا.
“হে পাখি, তুমি কতোই না সৌভাগ্যবান! আল্লাহর কসম, আমি যদি তোমার মতো হতাম! তুমি গাছের ওপর বস, ফল খাও, তারপর যেখানে ইচ্ছা উড়ে যাও! তোমার কোনো হিসাব নেই, ‘আযাবও নেই। হায়! আমি যদি রাস্তার ধারে একটি গাছ হতাম, সেখান দিয়ে একটি উট আসতো, আমাকে মুখে নিয়ে চিবাতো, হযম করতো, অতঃপর বিষ্ঠা হিসেবে বের করে ফেলে দিতো! আমি যদি মানুষ না হতাম!” (ইবনু আবী শাইবাহ, আল-মুছান্নাফ, (কিতাবুয যুহদ, ৭/২ (কালামু আবী বাকর [রা.]), খ. ৮, পৃ. ১৪৪)


তাছাড়া কার কী পরিণতি হবে- তা যেহেতু কারো জানা ছিল না, তাই সালাফে সালিহীন পরস্পর একে অপরকে ওলী ও বুযুর্গ হিসেবে প্রত্যয়ন করতেও ভয় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও কখনো এ জাতীয় দাবি ও প্রত্যয়নকে প্রশ্রয় দেননি। বরং ক্ষেত্রবিশেষে তিনি এ জাতীয় কার্যকলাপকে কঠোরভাবে বাধা দিয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-


বর্ণিত আছে, সাহাবী ‘উছমান ইবনু মায‘উন মারা যাবার পর উম্মুল ‘আলা আল-আনসারিয়্যাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন, رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ فَشَهَادَتِي عَلَيْكَ لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللَّهُ -‘‘হে আবুস সা’য়িব, তোমার ওপর আল্লাহর রহমত হোক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করেছেন!” এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللَّهَ أَكْرَمَهُ-‘‘তুমি কী করে জানলে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সম্মানিত করেছেন?’’ আমি বললাম, بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَنْ يُكْرِمُهُ اللَّهُ-‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক! তাহলে আল্লাহ তা‘আলা কাকেই সম্মানিত করবেন?’’
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
أَمَّا هُوَ فَوَاللَّهِ لَقَدْ جَاءَهُ الْيَقِينُ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرْجُو لَهُ الْخَيْرَ وَ وَاللَّهِ مَا أَدْرِي وَأَنَا رَسُولُ اللَّهِ مَاذَا يُفْعَلُ بِي
‘‘আল্লাহর কসম! তাঁর ব্যাপার হলো, তাঁর মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আমি তাঁর জন্য কল্যাণেরই আশাবাদী। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্তে¡ও জানি না যে, আমার সাথে কীরূপ ব্যবহার করা হবে?”
তখন উম্মুল ‘আলা বললেন, وَاللَّهِ لَا أُزَكِّي بَعْدَهُ أَحَدًا أَبَدًا -‘‘আল্লাহর কসম! আমি এরপর কখনো কারো শুদ্ধতার প্রত্যয়ন করবো না।” (বুখারী, আস-সাহীহ, [অধ্যায়: আত-তা‘বীর, পরিচ্ছেদ: রুয়ান নিসা’], হা. নং: ৬৬০১)

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, কোনো অবস্থাতেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও বুযুর্গ মনে করা এবং কথাবার্তায়, আচার-আচরণে ও বেশভূষায় এরূপ কিছু প্রদর্শন করা চরম গর্হিত।

অনুরূপভাবে (কুর’আন ও হাদীসে সুনির্দিষ্টভাবে যে সকল ব্যক্তি সম্পর্কে জান্নাতের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী এসেছে তাঁরা ব্যতীত অপর) কারো সম্পর্কে এরূপ নিশ্চিত ধারণা করাও সমীচীন নয় যে, তিনি পরিপূর্ণ পূতপবিত্র এবং আল্লাহর নিকট মহামর্যাদাবান ও সম্মানিত। এরূপ ধারণা প্রকারান্তরে আল্লাহর ওপর খবরদারি করার নামান্তর।


ইমাম ইবনুল হাজ্জ মৃ. ৭৩৭ হি. বলেন, فَكُلُّ مَنْ أَرَادَ الظُّهُورَ فَلَيْسَ مِنْ أَهْلِ الطَّرِيقِ فِي شَيْءٍ ، بَلْ هُوَ عَكْسُ حَالِهِمْ .

-‘‘যে কেউ নিজের (বুযুর্গী ও আমল) প্রকাশ করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে সে সত্য পথযাত্রীদের কোনো রাস্তাতেই নেই; বরং তার অবস্থা হলো তাদের বিপরীত।” (ইবনুল হাজ্জ, আল-মাদখাল, খ. ৩, পৃ. ৩২) । – ড. আহমদ আলীর ফেসবুক ওয়াল থেকে

-ড. আহমদ আলী, অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এফইউবি

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।